উপজেলার ভৌগলিক পরিচিতি
অবস্থান ও আয়তনঃ
মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা মাটিরাঙ্গা। এ উপজেলায় ও অ-উপজাতি মিলে এখানে প্রায় দেড় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। অতি:বৃষ্টিতে ধবসে পড়া পাহাড়েরর মাটির রং তামাটে লাল থেকে ‘‘মাটিরাঙ্গা’’ নামকরণ করা হয। ১৯৮৩ সালে মাটিরাঙ্গাকে উপজেলা ঘোষনা করা হয়। এ উপজেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত ও পানছড়ি উপজেলার সীমানা, দক্ষিণে রামগড়, পূর্বে খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি উপজেলার সীমানা এবং পশ্চিমে ফেণী নদী, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত ও রামগড় উপজেলার সীমানা। মাটিরাঙ্গা উপজেলার মোট আয়তন ৪৯৫.৪০ বর্গ কিলোমিটার।
ভূ-প্রকৃতিঃ উপজেলাটি মূলতঃ প্লাইস্টোসিন যুগের সোপান সমূহের একটি ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল তথা বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী এলাকা। তবে ভূমিরূপের ভিত্তিতে দুইটি ভাগে আলোচনা করা যায়, যথা- (ক) উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় এবং (খ) পাহাড়ী অঞ্চল (উপত্যকা) ও পাহাড়তলীর পললভূমি (ডাংগা)।
(ক) উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ঃ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়েরর আয়তন ৪২,৫৫১ হেক্টর যা উপজেলার মোট আয়তনের শতকরা প্রায় ৮৬,৪৭ ভাগ। এ উপজেলার সর্বত্র পাহাড় দেখা গেলেও এগুলোর উচ্চতা ও ঢালের ভিন্নতা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। পাহাড়গুলো প্রধানত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লম্বা-লম্বিভাবে বিস্তৃত এবং ছোট-বড় পাহাড়ী ছড়া বা উপত্যকা দ্বারা গভীরভাবে খন্ডিত। সাধারণত পাললিক শিলা দ্বারা খন্ডিত। উচ্চতর উপর নির্ভর করে পাহাড়গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
(১) উঁচু পাহাড়ঃ উঁচু পাহাড়ের আয়তন ৪,৮২০ হেক্টর। ১৫০ হতে ৩০০ মিটার এর অধিক উচ্চতার এসব পাহাড় প্রধানত অত্যধিক খাড়া ঢালে এসব পাহাড়ী ভূমিতে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস অত্যন্ত প্রকট হয়ে থকে, এর ফলে উর্বর মাটি স্থানচ্যুত হয়ে অনুর্বর এবং অগভীর মাটির সৃষ্টি করে এবং কোথাও কোথাও শক্ত পাথর বেরিয়ে আসে। এ উপজেলার পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ এলাকায় উঁচু পাহাড় রয়েছে।
(২) মাঝারি উঁচু পাহাড়াঃ মাঝারি উঁচু পাহাড়ের আয়তন ১৬,১৮৮ হেক্টর। ১৫০ হতে ৩০০ মিটার উচ্চতার এসব পাহাড় সাধারণত অথ্যধিক খাড়া ও অধিক ঢালসম্পন্ন এবং মাঝারি শক্ত ও শক্ত পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। উল্লিখিত ঢালের ফলে এতে প্রচুর পরিমাণে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। সরু উপত্যকা দ্বারা বিভক্ত এসব পাহাড়েও উর্বর মাটির স্থানচ্যুতি ঘটে। উপজেলার পূর্বাংশের ও পশ্চিমাংশের বিস্তৃীর্ণ এলাকায় এ পাহাড় রয়েছে। মাঝারি উঁচু পাহাড় সংলগ্ন স্থানে কিছু কিছু পললভূমি রয়েছে, যার বিস্তৃতি কম হওয়াতে মানচিত্রে আলাদাভাবে দেখানো যায়নি।
(৩) নিচু পাহাড়ঃ নিচু পাহাড়ের আয়তন ২১,৫৩ হেক্টর। ১৫০ মিটার কম উচ্চতাসম্পন্ন এসব পাহাড় উপজেলার প্রায় সর্বত্র বিদ্যমান। প্রধানত মাঝারি ঢালু হতে অধিক খাড়া ডালসম্পন্ন এবং সাধারণত নরম পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। নিচু পাহাড়ে ভূমিধস ও ভূমিকক্ষয়য়ের তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় এতে গভীর মাটির সৃষ্টি হয়। নিচু পাহাড় সংলগ্ন স্থানে কিছু কিছু পললভূমি রয়েছে। এগুলো বিস্তৃতি কম হওয়াতে মানচিত্রে আলাদাভাবে দেখানো সম্ভব হয়নি।
মাটিরাঙ্গার নির্দিষ্ট সময়ের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, তুষারপাত, শিশিরপাত, শিলাবৃষ্টি, কুয়াশা ও আদ্র্রতা সম্বলিত গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বুঝায়। বাংলাদেশে অন্যান্য স্থানের মত এ উপজেলা ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তগর্ত। এখানে ষড়ঋতুর মধ্যে প্রধানত তিনটি মৌসুম জোরালোভাবে পরিলক্ষিত হয়। বর্ষা মৌসুম সাধারণত মে হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। শত করা ৯০ ভাগ বর্ষণ এ সময় হয় । শীতকাল আরম্ভ হয় নভেম্বরে এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারীতে। এ মৌসুম অত্যন্ত শুল্ক ও শীতল কখনও সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। মার্চ ও এপ্রিল মাসকে গ্রীষ্ম বা প্রাক-বর্ষাকাল বলে গণ্য করা হয়। এ সময় বাতাস খুবই উত্তপ্ত হয় এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প খুবই কম থাকে। মাঝে মধ্যে বর্ষণসহ ঝড় বা দমকা বাতাস বইতে থাকে, যাকে কালবৈশাখী বলা হয। এ সময় কিছু শিলাবৃষ্টি ও হয়ে থাকে। এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেম্বর, জানুয়ারী মাসে পরিলক্ষিত হয়, যার গড় প্রায় ২১.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চরম উঞ্চ তাপমাত্রা মে মাসে ৪২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং চরম শীতল তাপমাত্রা জানুয়ারী মাসে ৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। শীতকালে গড় বৃষ্টিপাত ৮৭ মিলিমিটার যা ঐ সময়ের বাষ্পীভবনের চেয়ে অনেক কম। শীত মৌসুমে ৪/৫ মাস প্রায় শুল্ক থাকে। আবার বর্ষা মৌসুমের কোন কোন মাসে মাত্রাধিক বৃষ্টিপাত হয়। নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের মাসিক হার ৭৫ মিলিমিটারের কম বলে এ মাসগুলোকে শুল্ক মাস বলা হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS